বর্ণিত বিষয়ে কিচু একটা লেখার জন্যে কয়েক দিন ধরে ভাবছিলাম এবং কিছু বই সংগ্রহ করছিলাম। এমন সময় অগ্রিম প্রকাশিত ২৩শে মে’র টাইম ম্যাগাজিনটা হাতে আসে। পঞ্চান্ন পৃস্ঠায় ক্যাস্টানেডার নিবন্ধটা নজরে এলো। দেখলাম নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত প্রফেসর ক্যাস্টানেডার চিন্তার সাথে আমার চিন্তার একশ’ভাগ মিল রয়েছে। লেখাটা তৈরি করে কোন কাগজে পাঠাবো তা নিয়ে ভাবতে ভাবতেই দেরী হয়ে গেল। বাংলাদেশের কাগজ গুলোর চিন্তাধারা বিন লাদেনকে নিয়ে কোনদিকে তা স্পস্ট নয়। যখন দেখা গেল খোদ আমেরিকার বুদ্ধিজীবীরা বিন লাদেন হত্যার প্রক্রিয়াকে সমর্থন করেনি। এমন কি অনেকেই হত্যার বিষয়কে বিশ্বাসই করেনি। ইরান বলেছে বিন লাদেন অনেক আগেই মারা গেছেন। ওবামা নির্বাচনী বৈতরণী সহজে পার হওয়ার জন্যে এই নাটক তৈরী করেছেন। বলা হচ্ছে ইতোমধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা বেশ বেড়ে গেছে। আমেরিকার ৬০ বছরের দাসবন্ধু পাকিস্তানও নিজের মর্যাদা রক্ষার জন্যে ফিরে দাঁড়াবার চেস্টা করছে। পাকিস্তান পার্লামেন্ট আমেরিকার ওসামা অপারেশনের নিন্দা করেছে। চীন পাকিস্তানকে সমর্থন জানিয়ে পাশ থাকার ঘোষণা দিয়েছে।
আল্লাহর নবী পবিত্র নারী মরিয়ম পুত্র যিশুকে ( মুসলমানদের জন্যে ইসা নবী ) নিয়ে এখন কিছু বলতে চাই। তিনি ছিলেন একজন পবিত্র মানুষ। সন্যাসীর মতো অবিবাহিত জীবন যাপন করতেন। তাঁর জন্মটাই হচ্ছে আল্লাহপাকের কুদরত।তিনি পিতা ছাড়াই মায়ের উদরে এসেছেন। যদিও সে সময়ের সমাজনেতা ও সরকারী লোকেরা নানাভাবে তাঁর জন্মকে নিয়ে নানা কুত্সা রচনা ও রটনা করেছে। তাঁর মা পবিত্র নারী বিবি মরিয়মকে নিয়েও গাল মন্দ করেছে। মাত্র ৩২/৩৩ বছরে আল্লাহর নবী দুনিয়া ত্যাগ করে চলে গেছেন। তত্কালীন রোমান শাসক তাঁর মৃত্যুদন্ড দিয়েছিল। প্রশ্ন হলো কেন শাসক ও সমাজপতিরা তাঁকে সহ্য করতে পারেনি। কারণ তিনি সত্য প্রচার করতেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতেন। নির্যাতিতের মুক্তির জন্যে কথা বলতেন।যা সমাজপতি ও শাসকদের পছন্দ ছিলনা।তাঁর বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ ছিল তিনি নাকি নিজেকে রাজা ঘোষণা করেছেন। সত্য হচ্ছে তিনি কখনই নিজেকে রাজা ঘোষণা করেননি। যিশু বলেছিলেন ঈশ্বরের রাজ্যে বাস করো, ঈশ্বরের পাওনা ঈশ্বরকে দাও। ফলে শাসকদল তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করে তাঁকে হত্যার চেস্টা করে। যদিও যিশুর ভক্তরা মনে করেন তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। মুসলমানেরা এটা বিশ্বাস করেনা। যিশুর ভক্তরা এখন নানা ভাগে বিভক্ত। নানা জনের নানা মত। মুসলমানেরাও তেমনি বিভক্ত। যিশুকে নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব আর তাঁর ভক্তদের আজে বাজে কথা বলার শেষ নেই। তাঁর যৌন জীবন নিয়ে ছবি বানায়। তাঁকে নিয়ে মিথ্যা গল্প বানায়। পশ্চিমা জগত নাকি বাক স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের নামে এসব করে। এর মানে হচ্ছে খৃস্ট ধর্মে তথকথিত বিশ্বাসীরা তাদের নবী ও পবিত্র মানুষদের নিয়ে আজে বাজে কথা বলতে দ্বিধাবোধ করেনা। সেতো অনেক কাল আগের কথা। এখনও এই বিশ্বে নির্যাতিত মানুষের আর্তনাদ আছে। অসত্যের বিজয় হচ্ছে। মিথ্যা সারা দুনিয়াকে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। মিথ্যা বুক ফুলিয়ে বলছে আমরা বিজয়ী হয়েছি।
আমার মনে পড়ছে জগতবাসীর গৌরব মহামতি সক্রেটসের কথা। আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান ছাড়া তাঁর কাছে আর কোন সম্পদ ছিলনা। তিনি কোন রাজ্য দখল করতে চাননি। ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে কোন কটু বাক্যও বলেননি। শুধু একখানা কাপড় পরে নগ্ন পায়ে শহরে চলতেন। যুবকেরা তাঁর কথা শোনার জন্যে ভিড় জমাতো। তিনি যুবকদের যুক্তির কথা বলতেন। সত্যার কথা বলতেন। সরকার মনে করতো সক্রেটিস তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তত্কালীন এথেন্সের সরকার ছিল এক ধরনের গুন্ডা ও সন্ত্রাসীদের সরকার। তাঁরা সক্রেটিসের জ্ঞানকে ভয় করতো। আর এজন্যেই নানা মিথ্যা অভিযোগ এনে শাসকদল সক্রেটিসকে হত্যা করেছিল। তথকথিত ভুয়া আদালত তাঁকে বলেছিল আপনি যদি দেশত্যাগ করেন তাহলে আমরা আপনাকে মৃত্যুদন্ড দিবোনা। চলে যেতে সাহায্য করবো। তিনি রাজী হননি। তাঁর ভক্তরাও তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন দেশত্যাগের জন্যে। তিনি রাজী হননি। জেলখানার জেলারও তাঁকে গোপনে ছেড়ে দিতে রাজী হয়েছিল। কিন্তু তিনি বললেন, সত্য কেমন করে পালিয়ে যাবে। সত্যের কোন দেশ থাকেনা। তাই সক্রেটিস হাসিমুখে বিষ পান করে মৃত্যু বরন করেছিলেন। বিশ্ববাসী আজও সক্রেটিসকে স্মরণ করে, সম্মান করে। তত্কালীন শাসক বা বিচারকদের কথা কেউই জানেনা।
আরেক জন বিপ্লবী বীর পুরুষ হচ্ছেন আর্জেন্টিনার আর্নেস্টো চে গুয়েভারা। স্বচ্ছল শিক্ষিত সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে। মা বা ডাক্তারী পড়িয়েছেন এবং স্বাধীন মতামত নিয়ে গড়ে উঠতে সাহায্য করেছেন। মার্কসবাদের বিপ্লবের দীক্ষা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার শোষন থেকে মাতৃভুমির মানুষকে মুক্তি দিতে। এক সময় নিজ দেশ আর্জেন্টিনা থেকে বহিস্কার হন। এরপর থেকেই শুরু হলো অবিরাম ভ্রমণ। লাতিন আমেরিকার দেশ গুলো চসে বেড়ানো। চোখে মুখে স্বপ্ন একদিন এই পৃথিবীর নির্যাতিত ও শোষিত মানুষেরা মুক্তি লাভ করবে। বিপ্লবের দর্শন ছড়িয়ে দেয়ার জন্যে দেশে দেশে বিপ্লবী বাহিনী গঠণ করতে লাগলেন। বন্ধু ফিদেলের আহবানে কিউবার গেরিলা বাহিনীতে যোগ দিয়ে দেশটিকে মুক্ত করে কিছুদিন সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যান্কের প্রধান ও শিল্পমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু মন পড়ে থাকে গণমানুষের যুদ্ধের ময়দানে। তাই এক জায়গায় থিতু থাকতে পারেননি। আবার নতুন কোন দেশে বিপ্লবকে ছড়িয়ে দিতে ছুটে যাওয়া। কিউবাকে চির বিদায় জানাবার আগে বন্ধু ফিদেলকে যে চিঠি লিকেছিলেন তার কিছু আংশ এখানে তুলে দিলাম।
” আমি মনে করি আমার এখানকার দায়িত্ব সুসম্পন্ন হয়েছে। কিউবার বিপ্লব আমাকে আঞ্চলিক সীমায় বেঁধে রেখেছে। তাই আমি তোমাকে, কমরেডদেরকে এবং তোমার জনগণকে,যারা এখন আমারও স্বদেশবাসী তাদের সকলকে বিদায় জানাচ্ছি। আমি পার্টি থেকে আনুস্ঠানিক ভাবে পদত্যাগ করছি, আমার মন্ত্রীর পদ, কমান্ডারের পদবী এবং কিউবার নাগরিত্ব ত্যাগ করছি। কিউবার সংগে আমার আর কোন আইনী সম্পে্ক থাকলোনা, শুধু টিকে রইলো সেই বন্ধন যা আনুস্ঠানিক ভাবে কখনই শেষ করা যায়না। অন্যকোন ভুমি, অন্যকোন দেশ আমাকে আহবান করছে দায়িত্ব পালনের জন্যে। সে আহবানে আমি সাড়া দিতে পারি। কিউবার অগ্র নায়কের দায়িত্ব পালনের কারণে তুমি তা পারনা। তাই আমাদের বিচ্ছেদের সময় ঘনিয়ে এসেছে। আমার স্ত্রী ও সন্তানদের জন্যে বস্তুগত কিছুই রেখে যাইনি, সেজন্যে দু:খও নেই। বরং এজন্যে আমি খুশী। ওদের জন্যে আমি কিছুই চাইবোনা। এই মূহূর্তে তোমাকে এবং আমাদের জনগণকে বলার মতো কত কিছুইনা আছে, কিন্তু আমার কাছে তা অপ্রয়োজনীয় মনে হচ্ছে। কারণ আমি যা বলতে চাই শব্দের আধারে তার প্রকাশ সম্ভব নয়; তাই আরো কিছু পৃষ্ঠা ভরিয়ে তোলা নির্থক।
বিজয়ের পথে অন্তহীন এগিয়ে চলা
স্বদেশভূমি অথবা মৃত্যু
হৃদয়ের সবটুকু বিপ্লবী উত্তাপ ছড়িয়ে তোমাকে
আলিংগন করছি।
চে”
এরপর চে তাঁর ডায়েরীতে লিখেছেন, আমি পছনে ফেলে গেলাম কিউবার বিপ্লবে ফিদেলের পাশে ১১ বছরের কাজ, এক সুখের ঘর— সেই মাত্রায় সুখের একজন যাকে গৃহ বলতে পারে, যেখানে একজন বিপ্লবীকর্মে উত্সর্গকৃত জীবন যাপন করে, এবং রেখে গেলাম একগুচ্ছ ছেলে ময়ে যারা আমার ভালবাসার কথা অল্পই জেনেছে। সংগ্রাম অভি্যাত্রায় উপহার স্বরূপ সামান্য দু’টো জিনিষ নিয়েছিলাম। একটি ক্ষত বাঁধার পট্টি– স্ত্রীর কাছ থেকে; অন্যটি মার দেওয়া– পাথর বসানো একটি চাবির রিং। ডায়েরীর আরেক জায়গায় চে লিখেছেন, এখনও যদি আমাদের চারপাশে সাম্রাজ্যবাদের অস্তিত্ব থাকে আমরা আবার বেরিয়ে পড়বো একে প্রতিহত করতে; আর যদি তা শেষ হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে আমরা সবাই মিলে চাঁদে ছুটি কাটাতে যাবো।
বাবা মাকে চে শেষ যে চিঠি লিখেছিলেন তা থেকে সামান্য কিছু এখানে উল্লেখ করছি। ” আবারো চলেছি আমি যুদ্ধক্ষেত্রে। অন্তর্গত কোন কিছুরই পরিবর্তন হয়নি। শুধু আরো বেশী সচেতন হয়েছি। আমার মার্কসবাদ আরও দৃঢমূল ও নীতিঋদ্ধ হয়েছে। স্বাধীনতার জন্যে লড়াই করে যে জনগণ,সশস্ত্র সংগ্রামই তাদের মুক্তির একমাত্র পথ। এ আমার দৃঢ বিশ্বাস এবং এই বিশ্বাসে আমি অবিচল রয়েছি। অনেকে আমাকে বলবে স্বপ্নচারী, হাঁ আমি তাই। তবে একটু ভিন্ন ধরণের। আমি তাদের দলে যারা সত্যের প্রতি অংগীকার রক্ষায় জীবন উত্সর্গ করে।
দেখো, এটিই হতে পারে আমার চুড়ান্ত বার্তা। যদিও এমনটি আমি প্রত্যাশা করিনা, তবে যৌক্তিক হিসাব নিকাশের মধ্যে এ সম্ভাবনা তো রয়েছেই। আর তা যদি ঘটেই তবে তোমাদেরকে এই আমার অন্তিম আলিংগন। সেলিয়া , রবার্তো, জুয়ান মার্তিন, পাতোতিন, বিয়াত্রিজ এবং অনা সকলকে আমার চুমো দিয়ো। আর তোমাদের জন্যে এই বাউন্ডেলে একগুঁয়ে ছেলের পক্ষ থেকে থাকলো উষ্ণ আলিংগন।
নিজেদের মানে বিপ্লবী সম্পর্কে বলতে গিয়ে চে বলেছেন, আমাদের সম্পর্কে যদি বলা হয় ,আমরা একটু বেশী রোমান্টিক, আমরা গোঁড়া আদর্শবাদী, আমরা অসম্ভবের ভাবনা ভাবি, তাহলে এক হাজার একবার স্বীকার করবো, হাঁ, আমরা তাই।
মহান বিপ্লবী সাম্রাজ্যবাদের এক নম্বর শত্রু চে সম্পর্কে এই ছোট্ট পরিসরে বলে শেষ করা যাবেনা। এমন একজন বিপ্লবী এ জগতে আর জন্ম নিবে কিনা বলতে পারিনা। কিন্তু হৃদয় বলে, হে বিপ্লবর সন্তানেরা বার বার এ পৃথিবীর বুকে নেমে আসো। মজলুমদের জালেমের হাত থেকে রক্ষা করো। মজলুমের তখত তাউসকে জ্বালিয়ে ছারখার করো। জগতের সকল জালেমই মানবতার শত্রু, শান্তির শত্রু। আমাদের এই গ্রহের ৭শ’কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় অর্ধেক মানুষই খেতে পায়না। তাদের থাকার জায়গা নেই। তাদের সন্তানেরা শিক্ষা পায়না। একদিকে চরম দারিদ্র ও অশিক্ষা অন্যদিকে ভয়াবহ যুদ্ধ, অস্ত্রের ঝনঝনানি। কথায় কথায় পরদেশ আক্রমন করা। এমনি এক সময়ে আমি চে সক্রেটিস যিশু আর ওসামা বিন লাদেনের কথা স্মরণ করছি। এই চারজনকে রাস্ট্র বা জালেম শাসকরা হত্যা করেছে। এরা সবাই মানব জাতির মুক্তির জন্যে নিজেদের জীবন দান করেছেন। বলিভিয়ার গণমানুষের মুক্তির জন্যে সশস্ত্র বিপ্লবে কালে সিআইয়ের ঘাতকরা চে’কে গ্রেফতার এবং গুলি করে হত্যা করে। ১৯৬৭ সালের ৭ই অক্টোবর তাঁর আরও ছয় বন্ধু সহ গ্রেফতার করে বলিভীয় সেনাবাহিনীর হাতে। ৯ই অক্টোবর তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় হিগুয়েরা শহরে। এখানে সিআইএর এজেন্ট ও দেশত্যাগী কয়েকজন কিউবান চে’কে জেরা করে। চে’কে হত্যা করার জন্যে বলিভিয় সরকারের হাই কমান্ড থেকে নির্ডেশ আসে। ৯ই অক্টোবর বেলা ১টার দিকে চে’কে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর পরে মৃত চে’র হাত কেটে ফেলা হয় ও চেহারাকে বিকৃত করা হয়। বিকৃত ও খন্ডিত দেহাংশের ছবি তুলে ঘাতকরা দেয়ালে লাগিয়ে দিয়েছিল। চে’র লাশ কাউকে দেখানো হয়নি। বরং বলা হয়েছে লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। মৃত্যুর ৩০ বছর বলিভিয়ার ভ্যালেগ্রান্ডের কাছে একটি কবরে চে’র দেহাবশেষের খোঁজ পাওয়া যায়। ওই দেহাবশেষ কিউবায় ফিরিয়ে আনা হয় এবং সান্তা ক্লারার স্বাধীনা চত্বরে তাঁর সম্মানে নির্মিত সমাধিতে সংরক্ষণ করা হয়। কিউবার বিপ্লবী যুদ্ধে চে এই নগরীতে বিপ্লবের প্রথম বিজয় কেতন উড়িয়েছিলেন।
আমি যিশু নই, লোকহিতৈষীও নই। আমি যিশুর সম্পূর্ন বিপরীত। আমার বিশ্বাসের জন্যে আমি যে কোন অস্ত্র হাতে লড়াই করি। নিজেকে ক্রুশ বিদ্ধ হতে কিংবা শত্রুর হাতে তুলে না দিয়ে আমি শত্রুকে ধ্বংস করি। এই ছিল নিজের সম্পর্কে চে’র ঘোষণা।
২০১১ সালের মে মাসের ২ তারিখে আমেরিকার সিআইএ ও নৌসেনারা ইসলামী বিপ্লবের গেরিলা ওসামা বিন লাদেনকে পাকিস্তানের এবোটাবাদের একটি বাড়ি থেকে নিরস্ত্র অবস্থায় আটক করে ও হত্যা করে। যদিও আমেরিকার তাবেদার ও সমর্থক রাস্ট্র আর সরকারগুলো ওসামাকে একজন ভয়ংকর সন্ত্রাসী হিসাবে চিহ্ণিত করে বিশ্বব্যাপী প্রচার করেছে। আমেরিকা ওসামার লাশ কাউকে দেখায়নি। লাশ দাফনও করেনি। এমন কি তারা ছবি দেখাতেও রাজী হয়নি। বরং ওসামাকে হত্যা করে পৃথিবীর ভয়ংকর রাস্ট্র আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেছেন, ন্যায় বিচার সম্পন্ন হয়েছে। শুরুতেইতো বলেছি, তথকথিত ন্যায় বিচারের কথা বলেই সক্রেটিস ঈসানবী চে গুয়েভারাকে হত্যা করে আনন্দ প্রকাশ করেছে তত্কালীন শাসকরা। কিন্তু মানুষের হৃদয়ে বেঁচে আছে মানুষেরই প্রতিনিধিরা। চে’ এবং ওসামা ছিলেন একটি আদর্শের প্রতীক। সে আদর্শ সবার পছন্দ হবে এমনটি কেউ দাবী করেনা। চে’ এবং ওসামা উভয়ই ছিলেন বিপ্লবী এবং মার্কিন সাম্রজ্যবাদের শত্রু। দু’জনকেই হত্যা করেছে মার্কিনীরা। দু’জেরই অপরাধ গণমানুষের পক্ষে বিপ্লব করতে চেয়েছিলেন। দুজনই উচ্চ শিক্ষিত। একজন ডাক্তার,আরেকজন ইঞ্জিনিয়ার। একজন ধনীর ছেলে, আরেকজন মধ্যবিত্ত শিক্ষিত পরিশীলিত পারবারের ছেলে। একজন ছিলেন মার্কসবাদী, আরেকজন ইসলামিস্ট।
চে’ আজীবনই মার্কিনীদের শত্রু ছিলেন। ওসামা কিছুদিন আমেরিকানদের বন্ধু ছিলেন। ধনীর ছেলে হিসাবে আমেরিকান ক্ষমতাধরদের সাথে ওসামার বন্ধুত্ব ছিল। ওসামা এবং মার্কিনীরা আফগানিস্তানে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একসাথে যুদ্ধ করেছে। আমি বলবো, কৌশলগত দিক থেকে এটা ছিল ওসামার ভুল। আমেরিকান বা পশ্চিমা শাসকরা কখনই ইসলামের বন্ধু ছিলনা। তারা কখনই নিপীড়িত মানুষের পক্ষে ছিলনা। তারা উলংগ পুঁজিবাদের পূজারী। পূঁজিবাদই তাদের ঈশ্বর। ইসলাম কখনই পুঁজিবাদকে সমর্থন করেনা। ইসলাম দারিদ্রকে ঘৃণা করে। আল্লাহর রাসুল(সা) বলেন, দারিদ্র মানুষের ঈমান নস্ট করে। ক্ষুধার্ত মানুষের এবাদত হয়না। রাসুলের ইসলাম জগতে আজও প্রতিস্ঠিত হয়নি বলেই একদিকে এটমবোমার মিছিল, অন্যদিকে নিরক্ষর ক্ষুধার্থ মানুষের হাহাকার। এমন একটি পৃথিবী আল্লাহর রাসুল কখনই চাননি। চলমান বিশ্বে যিশু মুহাম্মদ(সা) ও ভগবান বুদ্ধের সমর্থকের সংখ্যা প্রায় পাঁচশ’ কোটির মতো। যদি তারা সকলেই তাদের পথ প্রদর্শকদের সত্যিকারে ভালবাসেন বা মান্য করেন তাহলে জগতের মানুষ এত নির্যাতিত ও নিষ্পেশিত হতোনা। এর মানে হচ্ছে তারা কেউই খাঁটি ঈমানদার নয়, নিজ নিজ আদর্শের প্রতি বিশ্বস্ত নয়। আস্থাহীন অবিশ্বাসী মানুষেরা জালেমের দোসর। তাই জালেমরা জগতকে দখল করে নিয়েছে।
ইসলাম বিরোধী রাজতন্ত্র ও বাদশাহীর বিরুদ্ধে বলেই ওসামা নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছেন। ভিনদেশের গোপন আস্তানায় থেকে তিনি শত্রুর হাতে নিহত হয়েছেন অপর এক মুসলমান দেশে। চে’ও নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন। তিনিও নিহত হয়েছেন ভিনদেশে। যদিও চে’ কিউবাকে মুক্ত করে সে দেশের নেতা ও মন্ত্রী হয়েছিলেন। তারপর আবার বিপ্লবের তাগিদে বেরিয়ে পড়েছিলেন। ওসামাও তাঁর বিপ্লবের বাণী জগতব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। ঘোষণা দিয়েছিলেন ইসলাম মানবতা ও জগতব্যাপী নির্যাতিত মানুষের প্রধান শত্রু মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালরা। সাম্রাজ্যবাদী মিডিয়ার কারণে ওসামা পৃথিবীর ভয়ংকর সন্ত্রাসী হিসাবে বহুল প্রচারিত। পশ্চিমা শাসকরা মনে করেন ওসামা বিভ্রান্ত ছিলেন এবং ইসলামকে ভুল ব্যাখ্যা করেছে। তিনি বহু যুবককে বিভ্রান্ত করেছেন। আমেরিকার শাসক গোস্ঠী ওসামার বিরুদ্ধে টুইন টাওয়ার ধ্বংস সহ হাজার হাজার নিরী্হ মানুষকে হত্যা করার অভিযোগ করেছে। কিন্তু এই অভিযোগটি এখনও প্রমানিত হয়নি। খোদ আমেরিকাতেই এ ব্যাপারে নানা মত রয়েছে। ইরাকে গণ বিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে বলে অভিযোগ করে ইরাক আক্রমন করেছে এবং লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে। সাদ্দামকে ফাঁসী দিয়েছে। তার পরিবারকে ধ্বংস করেছে। আফগানিস্তান আক্রমন করে সে দেশটাকে লন্ডভন্ড করেছে।
ওসামা নিজেই বলেছেন, তিনি একজন ধনী পরিবারের ছেলে। ইচ্ছা করলে পশ্চিমা যে কোন দেশে বসবাস করে বিলাস বহুল জীবন যাপন করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। বরং স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছেন একটি অনিশ্চিত জীবন। গুহায় গুহায় পালিয়ে থেকে শত্রুর হাত থেকে জীবন রক্ষা করা। প্রশ্ন হলো কেন এমন একটি জীবন বেছে নিয়েছিলেন। এটা কি কোন পাগলামো? না রোমান্টিসিজম? এ নিয়ে সারা বিশ্বের লেখকরা লিখবেন। ওসামাকে নিয়ে এখনও লেখালেখি চলছে। ক্যাস্ট্রো বলেছেন, ওসামার মৃত্যু আমেরিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেনি। বরং বাড়িয়েছে। ক্যাস্ট্রো আরও বলেছেন, আমেরিকা কিউবান দ্বীপ গুয়ান্তোনামো দখল করে সেখানে গোপন কারাগার তৈরী করেছে। পৃথিবীর বহুদেশ আমেরিকার গোপন কারাগার রয়েছে। কোন বিচার ছাড়াই তারা কমিউনিস্ট বা জংগী নাম দিয়ে মানুষ হত্যা করে। বিগত ৬০ বছরে বিশ্বব্যাপী কমিউনিজম আর ইসলামকে প্রতিহত করার নামে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে। ( দৈনিক আমার দেশ, ২৭ মে, ২০১১ )
লেকক; কবি সাংবাদিক ও ঔপন্যাসিক