জংগীবাদ ও সন্ত্রাসে গোঁজামিল / এরশাদ মজুমদার
রাজধানী ঢাকার অতি নিরাপত্তা বেস্টিত এলাকা গুলশানের একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে কয়েকজন মুসলমান নামধারী তরুণ বা যুবক সশস্ত্র হামলা চালিয়ে কিছু বিদেশী ও দেশীকে হত্যা করেছে বিশ্বব্যাপী প্রচারিত। কিছুদিন আগেও শুনতাম মাদ্রাসা গরীব ছাত্ররা এসব ঘৃণ্য কাজ করতো বলে অভিযোগ ছিল। হয়ত এখনও আছে। মাঝখানে এর ভিতর ঢুকে পড়েছে ধনী পরিবারের ইংরেজী শিক্ষিত ছেলেরা। কিন্তু কেন এমন হলো? এসব ক্ষেত্রে রাস্ট্র একরকম চিন্তা করে আর অন্যরা অন্য রকম চিন্তা করে। শনিবারের প্রথম আলোতে দেখলাম এ বিষয় নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছে। ছেলে মেয়েরা বা তরুণরা কাকে অনুসরণ করবে। জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেছেন, আমি এক সময় বাবাকে অনুসরণ করেছি, পরে এফ আর খানকে অনুসরণ করেছি। আমি মনে করি নেলসন ম্যান্ডেলা একজন রাজনীতিক যাঁকে অনুসরণ করা যায়। যাঁরা তাঁকে এক নাগাড়ে ২৭ বছর জেলে রেখেছে তিনি তাঁদেরকেই ভাই বলে বুকে টেনে নিয়েছেন। বংগবন্ধু আমাদের স্বাধীনতার নায়ক ও স্বপ্ন। কিন্তু জাতিকে তিনি ঐক্যবদ্ধ করতে পারেননি। যা পেরেছেন ম্যান্ডেলা।
তরুণদের অনুপ্রেরণায় দেখলাম জগত বিখ্যাত চে গুয়েভারার নাম। আমেরিকার নজরে চে ছিলেন একজন টেররিস্ট,জংগী,সন্ত্রাসী ও গণতন্ত্রের শত্রু। তাই চে‘কে নির্মম ভাবে হত্যা করে লাশ লুকিয়ে রেখেছিল। বলিভিয়া স্বাধীন হওয়ার পর চে‘র লাশ আবিষ্কার হয়। আমরা স্কুলে থাকতে বিদ্যাসাগর ও হাজী মহসিনের জীবনী পড়তাম। এখন পড়ানো হয়না। স্কুল কলেজে এখন আল্লাহর রাসুলের(সা) জীবনী পড়ানো হয় না। এক সময় পড়ানো হতো। জগতের একশ’ বিখ্যাত ব্যক্তির মাঝে মুহম্মদকে(সা) প্রথম ও প্রধান ব্যক্তি হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে। রাসুল হিসাবে বিবেচনা না করে শুধু মানুষ হিসাবে বিবেচনা করলেও তিনি সকল শ্রেষ্ঠেরও শ্রেষ্ঠ। রাসুলের জীবনের বহু ঘটনা আছে যা সকল মানুষের অনুসরণীয়। মাওলানা জফরী সাহেব বলেছে, জংগী শব্দটাকে বাংলাদেশে অপবিত্র করে ফেলা হয়েছে। এটি ভাল শব্দ। জং মানে যুদ্ধ। যারা যুদ্ধ করে তারাই জংগী। বাংলাদেশে কিছুলোক ইচ্ছাকৃত ও সুচতুর ভাবে উগ্রবাদী, সন্ত্রাসী,গুপ্ত হত্যাকারীদের জংগী বলে প্রচার করছে। চট্রগ্রামে সম্মানিত জংগী পরিবার আছে। সাভারে জং পরিবার আছে তাঁরা এখন কেমন আছেন জানিনা। প্রায়ই শুনি পুলিশ জেহাদী বই পেয়েছে। কিন্তু জানিনা জেহাদী বই কি?
৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের পাকিস্তানীরা বলতো দুস্কৃতকারী বলা হতো। জনসাধারন বুঝতো এরা কারা। কাশ্মীরের মুক্তিযোদ্ধাদের ও দিল্লী সন্ত্রাসী ও জংগী বলে প্রচার করে। ফিলিস্তিনী মুক্তিযোদ্ধাদেরও ইজরায়েলীরা জংগী, টেররিস্ট ও সন্ত্রাসী বলে থাকে। জার্মানীতে হামলার পর সরকার বলেনি আক্রমণকারী জংগী বা সন্ত্রাসী, বলেছেন আক্রমণকারী মানসিক রোগী বা বিকৃত মনের মানুষ। কিন্তু আমাদের দেশে বলা হতো তারা কারা কোন তদন্ত না করেই। আরেকটা বিষয় দেখে আমার ভাল লাগছে যে, ধর্মে অনাগ্রহী (সেক্যুলার) বুদ্ধিজীবী ও সরকার ইসলাম নিয়ে গভীর ভাবে ভাবতে শুরু করেছে। ইসলাম, কোরাণ, সুন্নাহর সঠিক ব্যাখ্যার জন্যে উদ্যোগ নিয়েছে। রাজার সাথে যখন আলেমদের বনিবনা হয়না তখনই দরবার ইসলামের ব্যাখ্যার জন্যে আলেম খুঁজতে আরম্ভ করেন।
নির্যাতিত শোষিত নিগৃহীত মানুষের বিদ্রোহ ও সশস্ত্র বিপ্লবের কথা শুনেছি। শুনেছি চীন ও রাশিয়ার বিপ্লবের কথা। ওই বিপ্লবের কারণেই কার্লমার্কস, লেনিন মাও জেদং ও স্টালিন জগত বিখ্যাত হয়েছেন। তখন পৃথিবীর দেশ দেশে চলছিল কমিউনিস্ট ও সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। এই সব বিপ্লব বিদ্রোহের লক্ষ্য ছিল গণমানুষের শাসন প্রতিস্ঠা করা। সেই বিপ্লবের চেতনা ও কর্মের ঢেউ এসে লেগেছিল আমাদের দেশে ও তার আশে পাশে। আমরা শুনেছি চারু মজুমদার ও নক্সালবাড়ির কথা। আমরা শুনেছি হক-তোয়াহার কথা।দূরদেশে শুনেছি ক্যাস্ট্রো আর চে’গুয়েভারার কথা।যৌবনে আমরাও মোহিত হয়েছিলাম ওই বিপ্লবের কথা শুনে। কারণ আমরা ওই সময়ে ভাবতাম কিভাবে নিপীড়িত মানুষের মুক্তি অর্জন করা যায়। শুনেছি ঐক্যবদ্ধ সশস্ত্র মাইনরিটির কাছে মেজরিটির পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। আমরা দেখেছি চীন ও রাশিয়ায় সাধারন মানুষের বিপ্লব। বিপ্লব হয়েছে সেখানে যেখানে ছিল রাজা বাদশাহ বা ডিক্টেটরদের শাসন। এসব রাজা বাদশাহ বা একনায়করা ছিলেন শোষক। ওই শোষকদের কাছ থেকে মুক্তির একমাত্র খোলা পথ ছিল সশস্ত্র বিপ্লব। আমাদের দেশেও বহু তরুন প্রাণ দিয়েছে গনমানুষের মুক্তির জন্যে। ভারত উপমহাদেশে ১৯২০ সালে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিস্ঠিত হলেও কমিউনিস্ট বিপ্লব সাধিত হয়নি। ভারতে এই বিপ্লব কখনই সম্ভব ছিলনা। সাধারন মানুষের ভিতর সনাতন ধর্মের প্রভাব ছিল অকল্পনীয়। যা এখনও জারী আছে। ভারতে প্রায় ৩০ কোটি হরিজন বা অচ্যুত। ধর্মীয়ভাবে এরা এক ধরনের দাস। ভারতের অন্যতম সংবিধান প্রণেতা বাবাসাহেব অম্বেদকার হরিজনদের মুক্তির জন্যে আন্দোলন করে শেষ পর্যন্ত হিন্দুধর্ম ত্যাগ করেছিলেন। কমিউনিস্টদের সম্পর্কে মুসলমান জন সাধারনেরও ধারনা ছিল তাঁরা ধর্ম বা খোদায় বিশ্বাস করেনা। ফলে সাধারন মুসলমানদের মাঝে কমিউনিজম তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। আরবদেশ ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে এখন গণবিদ্রোহ শুরু হয়েছে। অনেক দেশে শাসকরা ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। এখানে লড়াই চলছে গণমানুষের অধিকারের জন্যে। এক ধরনের গনতন্ত্রের জন্যে। গনতন্ত্র ছাড়া মানুষের সমাজ বা রাস্ট্র পরিচালনার জন্যে নতুন কোন প্রেসক্রিপশন এখনও পাওয়া যায়নি।
একদলীয় একমতের সমাজ ও রাস্ট্র ব্যবস্থা মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। বহুদলীয় বহুমতের সমাজকে মানুষ এখনও ভালবাসে বা পছন্দ করে। এমন কি কমিউনিস্টরাও এখন গণতান্ত্রিক পদ্ধিতিতে, মানে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চায়। পশ্চিম বাংলায় বামপন্থীরা ৩৫ বছর ধরে রাজ্য সরকার পরিচলনা করছে। নেপালের মাওবাদীরাও নির্বাচেনে অংশ গ্রহণ করছে। বাংলাদেশেও বামপন্থীরা ক্ষমতার সাধ পাওয়ার জন্যে সেনা সমর্থিত সরকারের অধীনে নির্বাচন করে ক্ষমতায় এসেছে। অভিযোগ রয়েছে মহোজোট সরকারের মন্ত্রী সভায় সিপিবি বা সাবেক মস্কোপন্থী অনেক নেতা রয়েছে। সোজা কথায় বলা যেতে পারে বামপন্থীরা সশস্ত্র বিপ্লবের পথ ছেড়ে ভোটের পথে এসেছে। এক সময় তারা বলেছেন, ভোটের বাক্সে লাথি মারো বাংলাদেশ স্বাধীন করো বলে ৭০ সালের নির্বাচন বয়কট করেছে। বৃটেন আমেরিকার দলগুলো বহুকাল আগে থেকেই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করছে। সোভিয়েত রাশিয়া ভেঙে যাওয়ার পর এখন রাশিয়াতেও নির্বাচনী হাওয়া বইছে।
কমিউনিস্ট , বামপন্থী বা কমিউনিজমকে উচ্ছেদ করার সাম্রাজ্যবাদী ধনতান্ত্রিক গণতন্ত্রের লেবাসধারী দেশগুলোর প্রোপাগান্ডায় বিভ্রান্ত হয়ে বিশ্বের মুসলমানেরা আমেরিকার সাথে মিতালী করেছিল। মুসলমানদের বুঝানো হয়েছিল কমিউনিস্টরা ধর্ম বা খোদা মানেনা। খোদাদ্রোহীদের বিনাশের অভিযানে মুসলমানদের সমর্থন আদায় করেছিল পশ্চিমা দেশগুলো। বামপন্থীরা এখন সাম্রাজ্যবাদের দোসর বা বন্ধুতে পরিণত হয়েছে। ছীন রাশিয়া দুটো দেশই এখন আমেরিকার বন্ধু। চীনও তার দেশের নীতির পরিবর্তন ঘটিয়েছে। দেশটি একদলীয় শাসন ব্যবস্থার অধীনে থেকেও আমেরিকার সাথে বন্ধুত্ব রক্ষা করে চলেছে। এক সময় চীন আমেরিকাকে কাগুজে বাঘ বা পেপার টাইগার বলে গালাগাল করতো। এক সময় কার্ল মার্কস বলেছিলেন ইসলাম একটি রেডিকেল ধর্ম। সমাজতন্ত্রের সাথে ইসলামের অনেক মিল। মাওলানা ভাসানীও ইসলামী সমাজতন্ত্রের ডাক দিয়েছিলেন। সেই ইসলাম এখন ইহুদী খৃস্টান ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আক্রমনের শিকার।বিশেষ করে পশ্চিমা খৃস্ট বিশ্ব ইসলামের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। ভারতে মুসলমানেরা নির্যাতিত হচ্ছে। পশ্চিমে বোরখা ও নেকাব নিয়ে টানাটানি করছে। বহু পশ্চিমা দেশ নারীদের পর্দার বিরুদ্ধে আইন পাশ করছে। চীনেও মুসলমানেরা অধিকারের জন্যে লড়াই করছে। অথচ এই চীনে ইসলাম প্রচারিত হয়েছে সাতশ’ সালের দিকে। আল্লাহর রাসুল(সা) জীবীত থাকতেই বলেছিলেন জ্ঞান লাভের জন্যে চীন সফরে যাও। ওই সময়ে আমেরিকা নামে কোন দেশ ছিলনা। ইউরোপীয়রা সভ্যতার আলো দেখতে শুরু করেছে। জ্ঞান বিজ্ঞানের পাদপীঠ ছিল এশিয়া। বিশেষ করে চীন ভারত মিশর ও ইরাক। এ অঞ্চলের সভ্যতার বয়স প্রায় আট হাজার বছর। এখন জ্ঞান বিজ্ঞান চলে গেছে পশ্চিমে। তাই ওরা শক্তি ও বিজ্ঞানের জোরে জগতবাসীকে পদানত করতে চায়।
ইসলাম ও মুসলমানদের পুণর্জাগরনের ভয়ে সারা বিশ্ব এখন ভীত। সবার টার্গেট এখন ইসলাম। ইসলামকে নানা ধরনের গালাগাল দেয়া হচ্ছে। আমেরিকা এবং তাঁর বন্ধুদের সাথে তাল মিলিয়ে বহু মুসলমান দেশও ইসলামকে জংগী ধর্ম বলে অভিহিত করছে। ইসলামী ধর্ম শিক্ষার কেন্দ্র মাদ্রাসা গুলো সন্ত্রাসীদের ট্রেনিং কেন্দ্র বলে চিহ্নিত করছে। মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের প্রেসক্রিপশন দিচ্ছে আমেরিকা ও তাঁর বন্ধুরা। এমনি প্রেসক্রিপশন দিয়েছিল বৃটিশরা পরাধীন ভারতের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার জন্যে। ওই কারণেই সে সময়ে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। যা এখনও জারী আছে। একটা হচ্ছে কওমী, আরেকটা হচ্ছে আলীয়া। বৃটিশ আমলেই সরকারী আলীয়া মাদ্রাসার বিরুদ্ধে দেওবন্দে মাদ্রাসা প্রিস্ঠিত হয়। দেওবন্দীরা ছিলেন স্বাধীনতাকামী ও ইংরাজের সব ব্যবস্থার বিরোধী। সেই সিলসিলায় কওমী মাদ্রাসা গুলো পরিচালিত হচ্ছে। কওমী মাদ্রাসা গুলো সরকারের কোন সাহায্য গ্রহণ করেনা। এসব মাদ্রাসা জনগণের সহযোগিতায় পরিচালিত হয়। আমেরিকার প্রেসক্রিপশন মোতাবেক হাসিনা সরকার মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের জন্যে উঠে পড়ে লেঘেছে। আমেরিকানরা এজন্যে প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহ করার কর্মসূচীও নিয়েছে।
ইসলাম ও মুসলমানদের মৌলনাদী ও সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করার জন্যে আমেরিকা ও তার দোসর দেশগুলো এখন নানা যড়যন্ত্রে লিপ্ত। ৯/১১ কার ঘটিয়েছে তা আজও বিশ্ববাসী জানতে পারেনি। অথচ সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমেরিকা ইরাকে হামলা চালিয়েছে। আমেরিকা বলেছিল ইরাকের কাছে গণ বিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে। কিন্তু ইরাকে এ ধরনের কোন অস্ত্র পাওয়া যায়নি। তথকথিত জাতিসংঘের প্রস্তাবের কথা বলে আমেরিকা ও তার বন্ধুরা বিভি্ন্ দেশ আক্রমন করে চলেছে। আফগানিস্তানকে আক্রমন করে পাকিস্তানকে অশান্ত করে তুলেছে। আমেরিকার পরামর্শে পাকিস্তান ইতোমধ্যরই মাদ্রাসা সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছে। বাংলাদেশে ১/১১র সরকারও এসেছিল আমেরিকার সমর্থনে ভারত ও ইউরোপীয় দেশগুলোর যড়যন্ত্রের কারনে।ওই সরকারই নারীনীতি তৈরী করে গেছে। আওয়ামী লীগ ও মহাজোট সরকার ১/১১ সরকারেরই ওয়ারিশ। মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কারের জন্যে আজ থেকে বছর দশেক আগে স্থানীয় বৃটিশ দূতাবাস একটা জরীপ চালিয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কারের সুপারিশ করা। বর্তমান সরকার সেই সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছে। বিদেশী প্রভুদের অনুরোদ ও সুপারিশে শেখ হাসিনা মন্ত্রীসভায় গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী নিয়েছেন যারা বাংলাদেশকে ইসলাম মুক্ত দেশে পরিণত করার কাজে নিয়োজিত। নুরুল ইসলাম নাহিদতো আওয়ামী লীগের লোকই নন। তিনি শিক্ষামন্ত্রী হয়েছেন প্রভুদের নির্দেশে। তিনি প্রভুদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে নিবেদিত।প্রভুরা মনে করেন আগামীদিনের পৃথিবীতে ইসলামই একমাত্র আদর্শ হিসাবে বিকাশ লাভ করবে। তাই ইসলামকে এখনই প্রতিহত না করলে পৃথিবী আমেরিকা ও তাদের মিত্রদের দখলে থাকবেনা। তাই পশ্চিমা জগতে জজবা উঠেছে, ইসলামের ভিতর জংগীবাদ লুকিয়ে আছে। মুসলমানরা মৌলবাদী তারা জেহাদে বিশ্বাস করে। তারা শ্লোগান তুলেছে শান্তির ইসলাম থেকে জেহাদী ইসলামকে আলাদা করতে হবে। আল ক্বায়েদা নামক সংগঠনের জন্মদাতা হচ্ছে আমেরিকান প্রশাসন। আলক্বায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেন আমেরিকানদের এক সময়ের ঘনিস্ট বন্ধু। তালেবানদের অবস্থাও একই ধরনের। আমেরিকা আলক্বায়েদা ও তালেবান যৌথভাবে লড়াই করেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আফগানিস্তানে। সেখানে রাশিয়ার পরাজয় হয়েছে। মুসলমান দেশ গুলোতে আল ক্বায়েদা ও তালেবান সংগঠন জন্ম নিতে পারে এই ভয়েই আমেরিকা তার বন্ধুরা শংকিত। তাই তারা ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আমেরিকানদের ইসলাম বিরোধী পরিকল্পনার কৌশল বাংলাদেশ সরকারও প্রয়োগ করার জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সরকার তাই সর্বত্র জংগীবাদ দেখতে পাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্ট আন্দোলন খতম করার জন্যে আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমা জগত বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। সমাজতান্ত্রিক আদর্শের বিশ্বাসী নাহিদ মতিয়া মেনন এখন আমেরিকার হয়ে কাজ করছে। তারা হয়ত বলবেন,আমরা আগেও ইসলামের বিরুদ্ধে ছিলাম এখনও আছি। আগে চীন রাশিয়ার হয়ে কাজ করেছি, এখন ইসলাম খতম করার প্রশ্নে আমেরিকার হয়ে কাজ করছি।
জংগীবাদ ধ্বংসের নামে এখন প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশের শহর বন্দর গ্রামে মোল্লা মৌলবী ও মাদ্রাসার ছাত্রদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আরবী উর্দু ফারসী লেখা কোন কিছু দেখলেই পুলিশ বা রেব মনে করছে জেহাদী পুস্তক। সুতরাং আর যায় কোথায়? এই অবস্থা আমাদের স্কুল ও কলেজ জীবনে দেখেছি। হাতে সোভিয়েত দেশ বা পিকিং রিভিউ দেখলেই গোয়েন্দারা পিছু নিতো। এখন আরবী বর্ণমালা জাতীয় কিছু দেখলেই হলো। এমনতো হতে পারে যে, যত জেহাদী ধরতে পারবে তত বেশী বিদেশী সাহায্য পাবে। সন্ত্রাস দমনের নামে আরবী শিক্ষিতদের হেনস্থা করা সরকারের আদর্শে পরিণত হয়েছে। মানবাধিকার লংঘনের ব্যাপারে সরকার ইতোমধ্যেই সারা বিশ্বে নাম করে ফেলেছে। রেব এবং পুলিশের টর্চার সেলের কথা বিদেশী কাগজে ছাপা হয়ে গেছে। রেব ও পুলিশ বিদাশী কাগজের অভিযোগ সব সময় অস্বীকার করে আসছে। এমন কি বাংলাদেশের মানবাধিকার লংঘনের আমেরিকান রিপোর্টও বাংলাদেশ সরকার অস্বীকার করেছে। পররাস্ট্র মন্ত্রী দীপুমনি বলেছেন, আমেরিকার রিপোর্টে কিছু আসে যায়না। জাতিসংঘতো এখনও কিছু বলেনি।
কয়েকদিন আগে এক শুক্রবার মসজিদ গুলোতে সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জংগীবাদ ও সন্ত্রাস দমন সম্পর্কে একটি তৈরি করা খোতবা বিতরন করেছে স্থানীয় পুলিশ। খতিব বা ইমাম সাহেবকে অনুরোধ করা হয়েছে খোতবাটি পাঠ করে মুসল্লীদের শোনাবার জন্যে। ওই সরকারী খোতবায় ফ্যাতনা ফাসাদ সম্পর্কে কোরাণের বেশ কিছু আয়াত উল্লেখ করে জংগীবাদ ও সন্ত্রাস কি তা বোঝাবার চেস্টা করা হয়েছে। একদিকে ধর্মীয় শিক্ষিত মানুষকে সাধারন মানুষের কাছে হেয় করা হচ্ছে, অন্যদিকে তাদের উপর নির্ভর করে সন্ত্রাস বিরোধী খোতবা প্রচারের চেস্টা করা হচ্ছে। মুসলমান দেশে কোরাণ ও হাদিস নিয়ে শাসকদের অনেক সমস্যা দেখা দেয়। অত্যাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে জেহাদ করার জন্যে কোরাণ ও হাদিস নির্দেশ দিয়েছে। কোরাণের ওইসব আয়াতকে অত্যাচারী শাসক ও তাদের তাবেদাররা সহ্য করতে পারেনা। কোন কোন দেশে খোতবায় ওইসব আয়াত পাঠ বা উল্লেখ করা নিষিদ্ধ রয়েছে। শুনেছি অনেক বড় বড় আলেম ও খতীব বিভিন্ন দেশে জেলে আছেন। বাংলাদেশেও আজ সে রকম পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নারীনীতি , শিক্ষা ব্যবস্থা ও সন্ত্রাস দমন নিয়ে সরকার কোরাণ ও হাদিসের মুখোমুখি হয়ে পড়েছে। সরকারী আলেমরা(যা সব সময়ই থাকে) কোরাণের এক রকম ব্যাখ্যা করছেন। জ্ঞানী গুণী আলেম সমাজ তাঁদের জ্ঞানের ভিত্তিতে কোরাণের ও হাদিসের ব্যাখ্যা করছেন।
লেখক: কবি সাংবাদিক ও ঔপন্যাসিক