তারেক জিয়ার মামলার রায় ও চলমান রাজনীতি / এরশাদ মজুমদার
বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি তারেক জিয়া অনেক বছর বাধ্য হয়ে নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন। এটা কোন স্বেচ্ছা নির্বাসন নয়। তিনি বাধ্য হয়ে বিদেশে অবস্থান করছেন। দেশে এলেই আইনি কায়দায় জেল জুলুম। এসব হলো তাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা।
বিদেশে টাকা পাচার বা মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় তারেক জিয়া বেকসুর খালাস পেয়েছেন। ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের সরকার তারেক জিয়াকে চিরদিনের জন্যে পংগু করার চেষ্টা করেছিল।এর একটা সুদূর প্রসারী লক্ষ্য ছিল। দেশবাসী ভাবতে শুরু করেছিল যে তারেক জিয়া আগামী দিনে বিএনপির নেতৃত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে পারবেন। যদিও আওয়ামী লীগ সহ ওই ঘরাণার অনেকেই তারেক জিয়ার রাজনীতিতে আগমনটাকে ভাল চোখে দেখেনি।আমার নিজের কাছে বিষয়টা তখন তেমন ভাল লাগেনি। ভাবটা এমন যে ,কি দরকার ছিল। কিন্তু পরে মনে হয়েছে রাজনীতিতে অাসার বয়স তারেক জিয়ার হয়েছে। নিদেনপক্ষে প্রশিক্ষনের জন্যে হলেও ওই সময়ে তাঁর রাজনীতিতে আসা সঠিক হয়েছে। এ ব্যাপারে শেখ হাসিনা পেছনে পড়ে গেছেন। এখন যদিও সজীব ওয়াজেদ রাজনীতিতে নিজেকে কিছুটা জড়িয়েছেন। যদিও দেশবাসী মনে করে সজীব রাজনীতি থাকবেন না। তিনি একজন বিদেশী নাগরিক। শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন,তাঁর পুত্রবধু একজন খৃষ্টান। মানে জগতের শেষনবী মুহম্মদকে (সা)ও শেষ কিতাব আলকোরাণে বিশ্বাস করেন না। এই খৃষ্টনরাই স্পেনে ক্রুসেড শুরু করে লাখ লাক মুসলমানকে হত্যা করেছিল। মুসলমানদের মসজিদে ঢুকিয়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল। ইতিহাসে উদ্বৃতি দিয়ে আমি বলছিনা যে সজীব ওয়াজেদের বউ এসবের জন্যে দায়ী। তবে তিনি এসব ঘটনার কখনও নিন্দাও করেননি।
বাংলাদেশকে রাজনীতি ও অর্থনীতি শূণ্য করাই ছিল ভারত সমর্থিত ১/১১র সরকারের লক্ষ্য।
দুই প্রধান দলের নেতৃত্ব পরিবর্তনের জন্যে ১।১১র সরকার আপ্রাণ চেস্টা করেছেন। ১/১১ ঘটানোর জন্যে তার আগে ২৮ অক্টোবর ঘটানো হয়েছে। ওই ঘটনার বীভত্স দৃশ্য টিভির বদৌলতে বিশ্ববাসী দেখেছে। শুধু দেখেনি ১/১১র সরকার। দুর্ণীতি দমনের নামে মঈন ইউ আহমদের সরকার সারা দেশে তুলকালাম কান্ড ঘটিয়েছে। গ্রামে গঞ্জে হাট বাজার চুরমার করে গ্রামীন অর্থনীতির কোমর ভেংগে দিয়েছে। যারা ওই সময়ে সারাদেশে জেলায় উপজেলায় যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন তারা মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকা আদায় করেছেন ভয় ভীতি দেখিয়ে। কিন্তু মইনুদ্দিনের সরকার নতুন নেতৃত্বের কথা বলে বহুলোককে নেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। অনেককে টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করেছেন। বিএনপির সাধারন সম্পাদক মান্নান ভুঁইয়াকে আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী বানাবার স্বপ্ন দেখিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বেচারা মান্নান ভুঁইয়া মারা গেলেন। তাঁর সাথে তখন যারা সাপ লুডু খেলেছিলেন তারা সবাই ভোল পাল্টিয়ে আগের যায়গায় ফিরে গেছেন। তাদেরকে এখন আমাদের আশে পাশেই দেখতে পাই। তখন যারা টিভিতে টকশো করার জন্যে তালিকাভুক্ত ছিলেন তারাও ভোল পাল্টয়ে বেশ ভাল তবিয়তে আছেন। তখনকার মিডিয়া যারা ১/১১র সরকারকে সমর্থন দিয়েছিলেন তারাও আছেন দেশের মানুষের খেদমত করার জন্যে। আইউব ইয়াহিয়ার সময়েও বেশ কিছু মিডিয়া লীডারকে দেখেছি যারা জনগনের বিরুদ্ধে কথা বলতো। যদিও মইনুদ্দিনের সরকার শুরুতে দুই নেত্রীকে আটক করেছিলেন, শেষ অবধি দেখা গেল তাঁরা দিল্লী সরকারের পক্ষে থেকে দিল্লীর লক্ষ্য বাস্তবায়ন করেছেন। অদ্ভুত এক নির্বাচনের মাধ্যমে তাঁরা খালেদা জিয়াকে পরাজিত করে শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমতা দিয়ে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। হয়ত গোপন কথা ফাঁস হয়ে যাবে তাই তাদের কাউকেই দেশে রাখা হলোনা। শেখ হাসিনাও খুব হাসতে হাসতে বলেছিলেন, তাঁর আন্দোলনের ফসল ১/১১র সরকার। ক্ষমতায় আসলে তাদের বৈধতা দিবেন। ক্ষমতায় এসে হাসিনা বিএনপিকে ধ্বংস করার খালেদা জিয়া ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে মামলার মামলা দিতে থাকেন। ১/১১র সরকারের দায়ের করা সকল মামলা জারী রেখেছেন। সেসব মামলা এখনও চলছে।
ওই সময়ে সবচেয়ে বেশী সাহসী মতামত প্রকাশ করেছিলেন ফরহাদ মজহার ও মাহমুদুর রহমান। দুজনের মধ্যে মাহমুদুর রহমান এখন জেলে আছেন কারন তিনি সত্যকথা বলতেন। আমাদের দেশে আইন সত্যের পক্ষে নয়, তথ্যের পক্ষে। আদালত তথ্য নিয়ে কাজ করে, সত্য নিয়ে নয়। ১/১১র সরকার কতৃক প্রতিস্ঠিত ও ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার মাহমুদুর রহমানকে সহ্য করতে পারেননি। তাই নানা রকম ঘটনা ঘটিয়েছেন।মাহমুদ একজন প্রখ্যাত ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ। ইতোমধ্যেই তিনি নিজের মেধার পরিচয় দিয়েছেন। আমাদের রাজনীতিতে তাঁর মতো একজন মেধাবী মানুষের অতীব প্রয়োজন। এরাই বাংলাদেশের ভাগ্য পরিবর্তন করে উচ্চ মর্যাদায় পৌঁছে দিতে পারবে। এ কারনেই পরিকল্পিত উপায়ে মাহমুদের উপর হামলা চলছে। এইতো ক’দিন আগে ফরহাদ মজাহারকে গ্রেফতার করার একটা জিকির তুলেছিল সরকার ও হালুা রুটির বরকন্দাজ তথাকথিত কিছু মিডিয়া নেতা ও কর্মী।বাংলাদেশের মিডিয়া জগত এমনিতেই সম্প্রসারনবাদী শক্তির তাবেদারের জীবন যাপন করছে। মিডিয়াতেও সিইওরা ঢুকে পড়েছে। শুনা যায় এদের মুজুরী নাকি লাখ লাখ টাকা। এরা আবার শ্রমিক নেতাও। এরাই ফরহাদ মজাহারের মতো একজন সাচ্চা দেশপ্রেমিককে হেনস্থা করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
১/১১র সরকার সবচে বেশী হামলা চালিয়েছে খালেদা জিয়া তার পরিবার আত্মীয় স্বজন ও বিএনপির উপর। তার কারন নির্বাচনের পর স্পস্ট হয়ে গেছে। এখন যারা ক্ষমতায় আছেন তারাও সমান ভাবে অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া তার দুই সন্তান ও দলের উপর। এই সরকারের সীমাহীন আক্রোশ হলো জিয়া এবং তার পরিবারের উপর। জিয়ার নাম মুছে ফেলার জন্যে চলছে নানা আয়োজন। আওয়ামী নেতারা বলে চলেছেন, জিয়া মুক্তিযুদ্ধ করেননি, তিনি পাকিস্তানের চর ছিলেন। একজন মন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি কোন রাজনৈতিক দল নয়। এর জন্ম সেনা ছাউনীতে। আওয়ামী লীগ কেন যে সেনা ছাউনীকে ভয় পায় জানিনা। অথচ আমাদের সেনা অফিসার ও সৈনিকরাই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রাণপণ করে যুদ্ধ করেছে। আর মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দিয়েছে এদেশের কৃষক শ্রমিক ছাত্র জনতা। আওয়ামী লীগ তৈরী করেছে প্রপাগান্ডা মেশিন।
এসব হলো প্রাসংগিক কথা। মূল কথা হলো আমাদের দেশের রাজনীতিতে আগামী দিনের নেতৃত্ব এখন কোথায়? মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক মহান মুক্তিযোদ্ধা সাবেক রাস্ট্রপতি শহীদ জিয়া ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড়ছেলে তারেক জিয়া রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারক ঐতিহ্য নিয়েই। এটা উড়ে এসে জুড়ে বসা নয়। তারেক জিয়ার এখন যা বয়স তা ভারতের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য রাহুল গান্ধীর মতোই। রাজনীতিতে না হলেও সামাজিক ভাবে তারেকের পরিবারেরও শত বছরের ঐতিহ্য রয়েছে। পিতার দিক থেকে তারেক বগুড়ার আধ্যাত্বিক ঐতিহ্যের উচ্চ শিক্ষিত পরিবারের সন্তান। বাংলাদেশের বহু ঐতিহ্যবাহী পরিবার তাদের আত্মীয়। মায়ের দিক থেকে তারেকের শিকড় রয়েছে ফেণী জেলার ঐতিহ্যবাহী শ্রীপুর মজুমদার বাড়িতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম ভাইস চ্যান্সেলর স্যার এ এফ রহমান ওই বাড়ির সন্তান। এই উপমহাদেশের চা শিল্পের সাথে জড়িত বহু বিখ্যাত পরিবার এই পরিবারের সাথে আত্মীয়তার বন্ধনে যুক্ত। অবিভক্ত বাংলার শেরে বাংলার মন্ত্রীসভার সদস্য নবাব বাহাদুর মোশাররফ হোসেনও এই পরিবারের সাথে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ। আপনাদের পরিচিত রাজনীতিক মির্জা গোলাম হাফিজ,কাজী জাফর, কর্ণেল জাফর, আহমদুল কবীর, শহীদ সাইদুল হাসান, ফরিদা হাসান,লায়লা রহমান কবীর এই বৃহত্ পরিবার গোস্ঠির অন্তর্ভুক্ত।ভাগ্যের অদৃশ্য নদী জিয়া পরিবারকে প্লাবনের মতো ভাসিয়ে নিয়ে এসেছে রাজনীতির মঞ্চে। ৭১ সালের ২৬/২৭ মার্চ ভাগ্য জিয়াউর রহমানকে টেনে নিয়ে গেছে কালুরঘাট রেডিও স্টেশনে। তিনিই পাঠ করেন স্বাধীনতার ঘোষণা। ঘোষণার পেছনে নানা জনের নানা কথা আছে। আমি এখন এখানে সেসব বিষয় নিয়ে কিছু বলবোনা। সময় সুযোগ হলে আরেক নিবন্ধে সেসব কথা লিখবো। সেই জিয়ার গলার আওয়াজ দেশবাসী আবার শুনতে পেলো ৭ নবেম্বর,১৯৭৫। প্রথমবার ছিলেন মেজর, দ্বিতীয়বার ছিলেন মেজর জেনারেল, আর শহীদ হওয়ার সময় ছিলেন দেশের রা্স্ট্রপতি। মা খালেদা জিয়া পারিবারিক ভাবে বিশাল ঐতিহ্যের অধিকারী হলেও সংসার জীবন শুরু করেছেন একজন সেনা অফিসারের স্ত্রী হিসাবে। জীবন যাপন চলেছে কঠোর নিয়মানুবর্তিতার ভিতর। তিনি কখনও ভাবেননি একদিন তাকে এদেশের বিশাল রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতৃত্বের হাল ধরতে হবে। এসবই হচ্ছে ভাগ্যের অদৃশ্য রশির টান। কিচেন থেকে বেরিয়ে এসে তিনি রাজনীতির বিশাল রাজপথে নেমেছেন এবং খ্যাতি লাভ করেছেন একজন আপোষহীন নেত্রী হিসাবে। সেই থেকে তিনি রাজপথেই আছেন।
ভারতীয় কংগ্রেসের বর্তমান সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীও সেভাবে রাজনীতিতে এসেছেন। তিনি একজন বিদেশী নারী।বৈবাহিক সূত্রে ভারতে এসেছেন। তাঁর স্বামী রাজীব গান্ধী একজন পেশাদার পাইলট ছিলেন। মা ইন্দিরা গান্ধী নিহত হওয়ার পর তিনি দল ও দেশের প্রয়োজনে রাজনীতিতে আসেন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন। রাজিব গান্ধী নিহত হওয়ার পর সোনিয়া গান্ধী রাজনীতিতে আসেন এবং কংগ্রেসের নেতৃত্বের হাল ধরেন। নির্বাচনে সংখ্যাগরিস্ঠ আসন পাওয়ার পর সোনিয়ারই প্রধান হওয়ার কথা ছিল। বিজেপি তাকে বিদেশী বলে সমালোচনা করায় তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মনমোহন সিংয়ের নাম প্রস্তাব করেন। এখন সোনিয়া কংগ্রেস সভানেত্রী আর তার ছেলে রাহুল গান্ধী সহ সভাপতি। এ নিয়ে ভারতে কোন সমালোচনা নেই। রাহুল ইতোমধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। ভারতের আগামীদিনের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে অভিহিত হচ্ছেন।
কিন্তু বাংলাদেশের হাওয়া অন্য রকম বইছে। মিডিয়া এবং বিএনপি বিরোধী শক্তি তারেক জিয়ার রাজনীতিতে আগমন কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। সুতরাং তার চরিত্র হনন করতে হবে। ১/১১র সরকারই শুরু করেছিল চরিত্র হননের অভিযান। সেই অভিযান এখনও চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় প্রতিদিনই তারেককে দুর্ণীতিবাজ আখ্যায়িত করে বক্তৃতা দিচ্ছেন। পুরো আওয়ামী লীগই এখন তারেকের ইমেজ ধ্বংস করার স্থায়ী কর্মসুচী হাতে নিয়েছে। কেয়ারটেকার সরকারের সামরিক নেতা মইনুদ্দিন বলেছিলেন, তারেক বিদ্যুত খাতের বিশ হাজার কোটি মেরে দিয়েছে। কোন অভিযোগই এখনও প্রমানিত হয়নি। সরকারের নির্দেশে দুদক তারেকের বিরুদ্ধে এখনও দুর্ণীতির মামলা খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু বিএনপি আওয়ামী লীগ আর সরকারের এই প্রপাগান্ডার সঠিক জবাব দিতে পারছেনা।কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সন্তান জয়ের দুর্ণীতির খবর ছেপে দৈনিক আমার দেশ এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমান জেলে গেছেন। তার উপর সরকারের আক্রোশ এখনও কমেনি। তারেককে রাজনীতি থেকে নির্বাসন দেয়ার সরকারী উদ্যোগ একেবারেই অমুলক নয়। তারেক নিশ্চিত ভাবেই আগামী দিনের দিনের একজন নেতা জেনেই সরকার ও আওয়ামী লীগ তাকে সরিয়ে দিতে চায়। অপরদিকে শেখ হাসিনার পরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব কে দিবে এখনও ঠিক হয়নি। জয় ওয়াজেদ আসবে আসবে করেও এখনও তার আসা হয়ে উঠছেনা। কেন যে সে আসতে পারছেনা তাও স্পস্ট নয়। আসেতো আবার ফিরে যায়। মাকে ক্ষমতায় রেখে সব রকম সরকারী প্রটোকল নিয়ে রাজনীতি করা খুবই সহজ। তারেক কিন্তু রাজনীতি শুরু করেছে তৃণমূল থেকে। তাঁর জন্যে কোন প্রটোকলের দরকার হয়নি।
রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী ও রাস্ট্রপতিদের সন্তানদের দুর্ণীতির অভিযোগ নতুন কিছু নয়। এ অভিযোগ বিশ্বব্যাপী। ইন্দিরা গান্ধীর সন্তান রাজীব ও সন্জয়ের বিরুদ্ধে দুর্ণীতির বহু অভিযোগ এসেছিল। রাজীবের বিরুদ্ধে বফোর্স কেলেংকারীর খবর বহুদিন মিডিয়াতে এসেছে। পশ্চিম বাংলার অবিসম্বাদিত নেতা জ্যোতি বাবুর ছেলের বিরুদ্ধেও দুর্ণীতির অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। জ্যোতি বাবুর ছেলে একজন প্রতিস্ঠিত ব্যবসায়ী। কোলকাতার পার্ক হোটেলের মালিক জ্যোতি বাবুর বেয়াই। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশাইর ছেলের বিরুদ্ধেও দুর্ণীতির অভিযোগ ছিল। পাকিস্তানের দিকে তাকালেও দেখতে পাবেন জুলফিকার আলী ভুট্টোর মেয়ে বেনজীরের বিরুদ্ধে সুইস ব্যান্কে টাকা রাখার তদন্ত এখনও চলছে। সেই বেনজীর দু’বার পাকিস্তানের প্রধান হয়েছে। এখন বেনজীরের ছেলে বিলাওয়াল রাজনীতিতে আসছে। পিপিপির আগামীদিনের নেতৃত্বে তার নাম ঘোষিত হয়েছে।নেওয়াজ শরীফ সওদী আরবে বেশ কয়েক বছর স্বপরিবারে নির্বাসিত জীবন যাপন করেছেন। জেনারেল মোশাররফ এই দু’জনকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিলেন। দীর্ঘকাল নির্বাসনে থেকে তিনি দেশে ফিরে এখন জেলে আছেন। জেনারেল এরশাদের আমলে বৃটেন থেকে এটিপি বিমান কেনার ব্যাপারে থ্যাচারের ছেলের বিরুদ্ধে দুর্ণীতির অভিযোগ উঠেছিল। মায়ের প্রভাব খাটিয়ে সে মধ্যপ্রাচ্যেও ব্যবসা করার চেস্টা করেছে বলেও বৃটিশ মিডিয়া অভিযোগ করেছে।রাজনীতিতে এসব নোংরামী থাকবেই।
তারেক আসলে রাজনৈতিক প্রপাগান্ডা ও মিডিয়ার বিরাট শিকার। এর পিছনে দেশী বিদেশী যড়যন্ত্রও থাকতে পারে। বিএনপি আসলেই বাংলাদেশের বেশীর ভাগ মানুষের দল। এই দলের মাধ্যমেই মানুষ নিজেদের আকাংখার প্রতিফলন দেখতে চায়। তারেক এখন তরুন ও যুব সমাজের নেতা। একটা বড় স্বপ্ন নিয়ে সে রাজনীতির মাঠে এসেছে। খুব পরিকল্পিতভাবেই সামনের দিকে যাচ্ছিল। সারাদেশ সফর করে তৃণমূলে বিরাট সাড়া ফেলে দিয়েছিল। ফলে দেশী ও বিদেশী বাংলাদেশের শত্রুরা শংকিত হয়ে পড়েছিল। ১/১১র সরকার বিদেশীদের পরামর্শেই তারেককে চিরদিনের জন্যে পংগু করে দিতে চেয়েছিল।আল্লাহতায়ালা রক্ষা করেছেন। কিন্তু ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয়নি। তবে তারেকের ভুলগুলোকেই তার শত্রুরা কাজে লাগিয়েছে। এবং এখনও লাগাচ্ছে। রাজনীতিতে ইমেজ বা ভাবমুর্তি রক্ষা করা একটা বড় কাজ। শত্রু কোন দিক থেকে আক্রমন করতে পারে সে ব্যাপারে সজাগ থাকাটাও গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অল্প বয়সেই তারেকের অনেক মোসাহেব ও তোষামোদকারী জুটে গিয়েছিল। শহীদ জিয়ার সততা ও ইমেজ ছিল বিএনপির প্রধানতম মুলধন। সেই মুলধন কিছুটা হলেও কলংকিত হয়েছে তোষামোদকারীদের ভুল পরামর্শ কর্মের কারনে। আশা করছি< তারেক এখন তার ভুল গুলো বুঝতে শুরু করেছে। রাজনীতিতে নির্বাসিত জীবন নতুন কিছু নয়। বেনজীর ভুট্টো বহু বছর নির্বাসিত থেকে দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী হয়েছে।ইরান বিপ্লবের মহান নেতা ইমাম খোমেনী বহু বছর নির্বাসনে ছিলে। বিদেশে থেকেই বিপ্লবের কাজ চালিয়ে গেছে। ইসলামী বিপ্লবের এই মহান নেতার দেশে আগমনের মাধ্যমেই রেজা শাহ পাহলবীর পতন হয়েছিল। তারেকের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। দেশের মানুষের জন্যে রাজনীতি করলে তারেককে আরও অনেক বেশী কস্ট স্বীকারের জন্যে প্রস্তুত থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে তারেক এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়ার বড়ছেলে। দেখা যাক বাংলাদেশের রাজনীতি কোন দিকে যায়? ভারত সরাসরিই বাংলাদেশের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। হাই কমিশনার পংকজ শরণ বলেছেন বাংলাদেশে তাদের স্বার্থ আছে। তাই তারা আমেরিকার সাথে যৌথভাবে চলমান সংকট কাটাবার জন্যে কাজ করে যাচ্ছেন।
আমিতো মনে করি ভারতের পরামর্শে শখ হাসিনা এ সংকট তৈরি করেছেন। ১/১১র সরকারকেও ক্ষমতায় বসিয়েছিল ভারত। ঠিক পাঁচ বছর আবার সেই পুরাণো সংকট দেখা দিয়েছে। ২০০৬ সালে সংকট তৈরি করেছিলেন শেখ হাসিনা। এবারের সংকটও তিনিই সৃষ্টি করেছেন। তাই ভারত প্রকাশ্যে মোড়লীপনা শুরু করে দিয়েছে। তারেক এখনও নির্বাসনে আছেন। একটি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন। দেখা যাক, ভারত শেষ কি চাল দেয়? ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনে ১৫৪ জন লোক বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পরও সে সংসদ এখনও বহাল আছে। যে নির্বাচনে দেশের মাত্র পাঁচ ভাগ মানুষ নির্বাচনে ভোট দিয়েছে বলে বলা হয়। কিন্তু ভারত অন্ধ ভাবে সে নির্বাচনকে সমর্থন দিয়েছে। কারণ ভারতের স্বার্থ আছে। কি স্বার্থ তা দেশবাসী ভাল করেই জানেন। এখন প্রশ্ন উঠেছে শেখ হাসিনা একটা স্বচ্ছ অবাধ দিতে চান না কেন? কেউ হয়ত তাঁকে বুঝিয়েছে বিএনপিকে যদি নির্বাচনের বাইরে রাখা যায় তাহলে কালক্রমে দলটি আর টিকে থাকবেনা।
এরশাদ মজুমদার, কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
http://www.humannewspaper.wordpress.com