কাঁচাপাকা হলুদসবুজ সকল খাবারেই এখন ভেজাল । শিশুর খাবারে ভেজাল
বুড়োর খাবারেও ভেজাল। হাসপাতালে রুগীরা বাসি ভেজাল খাবার খায়।
পুলিশ হাসপাতালের খাবারেও ভেজাল। দামী দামী কোম্পানীর খাবারেও
ভেজাল। বাসি পঁচা ভেজাল দ্রব্য বা খাবার বিক্রি করার মূল কারণ বেশী
বেশী মুনাফা করা। সমাজে মুনাফার লোভটা খুব বেশী বেড়ে গেছে। ফলে
কারো পৌষমাস,কারো সর্বনাশ।
খাবার বা দ্রব্যে ভেজালের কথাটি সংবাদপত্র চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে।
হাজারো ব্যর্থতার মাঝে সংবাদপত্র বহুদিন পরে একটি দায়িত্বশীল কাজ
করেছে। সংবাদপত্রকে হাজারো সালাম। কতৃপক্ষকেও হাজারো ধন্যবাদ
গভীর ঘুম থেকে জেগে উঠার জন্যে।
এ ধরনের ভাল কাজ করাই সংবাদপত্রের কাজ। যেকোন কারণেই হোক
তারা ভাল কাজটি করতে পারছেন না। এমনটি এক সময় ছিলনা। হয়ত
সংবাদপত্র এখন বড় ধরণের ব্যবসা। বড় মুনাফার সোজা পথ, প্রভাব বিস্তারের
সোজা রাস্তা। যিনি মিডিয়ার মালিক তিনিই ভোগ্যপন্য, হাসপাতাল ও অষুধ
কোম্পানীর মালিক। এমনও হতে পারে তিনি সংসদের একজন সদস্য। এমনও
হতে পারে যে তিনি সাংবাদিকদের নকল খবর পরিবেশনের জন্য উত্সাহিত
করেন,পুরস্কৃত করেন।
আমাদের প্রিয়দেশ বাংলাদেশের চিত্রটি আজকাল এ রকমই হয়ে গেছে।
পরীক্ষায় নকল জাতীয় ব্যধিতে পরিণত হয়েছিল। শিক্ষা ব্যবস্থাকে নকল মুক্ত
করার জন্যে বর্তমান সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশবাসী এ ব্যাপারে সফল্যের
মুখ দেখতে শুরু করেছে। এ অভিযান সকল সরকারের আমলেই অব্যাহত থাকা
দরকার। নকলের ব্যাপারেতো সরকারী দল আর বিরোধী দল নেই। বাসি পঁচা
ভেজাল খাবারের ব্যাপারেও নিশ্চয়ই সরকারী দল বিরোধী দল নেই। বিরোধী দল
অবশ্য নকল ও ভেজালের বিরুদ্ধে কোন বিবৃতি এখনও দেয়নি।
ভেজাল নকল দুষিত পরিবেশ জাতীয় সমস্যা।
নকল মানুষ, নকল পুলিশ, নকল সেনা অফিসার, নকল টাকা, নকল আসামী
আমাদের জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। পুলিশ আসল আসামীকে ছেড়ে দিয়ে
নকল আসামীকে জেলে পাঠিয়ে দিচ্ছে। সে আসামী বছরের পর বছর জেল খাটছে।
ভেজাল অষুধ বানিয়ে যিনি শিল্পপতি হয়েছেন তিনি আসল স্বাস্থ্যমন্রীও হয়ে যেতে
পারেন। সেই একই ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েরও মালিক হতে পারেন।
এমন ধরনের মানুষকে এখন সুশীল সমাজের সদস্য হিসাবেও দেখা যায়। বিভিন্ন
সেমিনারে বক্তৃতা দিয়ে বেড়ান। বলিউডের সিনেমায় ইদানিং এ ধরনের চরিত্র দেখা
যায়।
নীতি আদর্শ ও মূল্যবোধের ক্ষেত্রে বিরাট বিপর্যয়ের পরেও দেশের অর্থনৈতিক
থেমে যায়নি। জাতীয় প্রবৃদ্ধি বেড়েই চলেছে। মাথাপিছু আয়ের পরিমাণও বাড়ছে।
রাজধানীর সাথে গ্রামের যোগাযোগ দিন দিন বাড়ছে। ভেজাল আয়ও নিয়মিত
অপ্রতিরোধ্যভাবে বেড়ে যাচ্ছে। ফলে কালো বা ভেজাল টাকার দাপট সীমাহীন
ভাবে বিস্তারলাভ করেছে।
আর এরই প্রভাব সুস্পষ্ট হয়ে দেখা দিয়েছে রাজনীতি,সমাজনীতি শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে।
কালোটাকা সংসদ, কেবিনেট, আদালত সহ সর্বত্র ঢুকে পড়েছে। সমগ্র অর্থনীতি
সাদা আর কালোতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তবে সাদা আস্তে আস্তে অস্পস্ট হয়ে
যাচ্ছে।
দেশের ক্রেতা বা ভোক্তারা অসম্ভব ভাবে অসহায় হয়ে পড়েছে। ভোক্তার অধিকার
রক্ষার ব্যাপারে কতৃপক্ষ আজও তেমন সজাগ নন। তেমন শক্তিশালী আইনও
দেশে তেমন নেই। বড় বড় কথা কথা প্রায়শই শুনা যায়। ভোক্তা অধিকার রক্ষায়
শক্তিশালী তেমন সংগঠণও নাই। বর্তমান বাজারমূল্য ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় শিকার
এখন অসহায় ক্রেতা। মুক্তবাজার ও ডিমান্ড এন্ড সাপ্লাইয়ের কথা বলে কতৃপক্ষ
নৈতিক দায়িত্ব এড়িয়ে চলেছেন। যার যেমন ইচ্ছা দাম হাঁকিয়ে চলেছে। দাম সঠিক ও
ন্যায্য কিনা তা দেখার কোন সরকারী সংগঠণ নেই।
দশ পনের বছর আগেও পণ্যমূল্য যাচাই বাছাই করার জন্য একটি সরকারী
সংগঠণ ছিল। বাণিজ্য মন্রণালয়ের অধিনস্ত এ সংগঠনের নাম ছিল পণ্যমূল্য
নির্ধারণ অধিদপ্তর। এ অধিদপ্তরের কাজ ছিল যে কোন পণ্যের উত্পাদন ব্যয়
পরীক্ষা নিরীক্ষা করে মূল্য নির্ধারণ করা। এরশাদ সরকার এ দপ্তরটি তুলে দিয়েছে।
মনে করুন, টুথপেস্টের একটি টিউবের গায়ে দাম লেখা আছে ৫০ টাকা। দামটি
কিভাবে নির্ধারিত হলো জানার কোন উপায় নেই। পরীক্ষা করে দেখা গেল ওই
টিউবে পেস্ট আছে মাত্র ৫ টাকার। বাকী ৪৫ টাকা বাজারজাত করন খরচ।
এক কেজি সবজী/শাকের দাম ঢাকার বাজারে ২০ টাকা। গ্রামের আড়ত থেকে
ওই এক কেজি শাক কেনা হয়েছে ২ টাকায়। বাকী আঠার টাকা যাতায়াত খরচ
ও মুনাফা।
নাইজেরিয়ার দুই সেন্টের কলা আমেরিকায় বিক্রি হতো এক ডলারে। বাকী ৯৮ সেন্ট
জাহাজভাড়া, প্রচার ও মুনাফা খাতে আদায় করা হয়েছে। এ নিয়ে আমেরিকার
ভোক্তারা তোলপাড় করেছে। বিষয়টি আমেরিকার কংগ্রেসে আলোচিত হয়েছে।
এটি ছিল ভোক্তা শোষণ ও ঠকানোর বিরুদ্ধে আমেরিকাবাসীর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন।
আমেরিকার ভোক্তা সংগঠনগুলো এখন পৃথিবীর সবচাইতে শক্তিশালী।
বাংলাদেশের বাজারে এখন ভোক্তা শোষণ চরম আকার ধারণ করেছে। বড় বড়
কোম্পানীগুলো ১২ পয়সার মুড়ি আকর্ষণীয় প্যাকেটে ১২ টাকা বিক্রি করছে। এর
প্রচার খরচ পাঁচটাকা,মুনাফা পাঁচটাকা, আর বাকীটা মুড়ি ও যাতায়াত খরচ।
দেশবাসী এখন ভেজাল,পঁচা,বাসি পণ্য/খাবার, ভেজাল/কালো টাকা আর ভেজাল
মানুষের হাতে বন্দী হয়ে পড়ে আছে।
শিল্প মন্রণলয়ের অধীনে বিএসটিআই(বাংলাদেশ মান নিয়ন্রণ ও পরীক্ষা ইন্সটিটিউট)
উত্পাদিত শিল্পপণ্যের মান নিয়ন্রণ পরীক্ষা করে থাকে। তবে প্রচলিত আইন দূর্বল
থাকায় এই প্রতিস্ঠান তেমন ফলপ্রসু ভূমিকা পালন করতে পারছেনা।
শিল্পপণ্যের ভেজাল ছাড়া অন্য পণ্যের ভেজাল পরীক্ষা করার ব্যবস্থা বিএসটিআই
পরীক্ষাগারে নেই। অথবা এই প্রতিস্ঠানের এখতিয়ারে নেই।
ব্যাপক ভেজাল প্রবণতা রোধের জন্য আরও কঠিন আইনের প্রয়োজন।ভেজাল ,পঁচা
বাসি খাবার পরীক্ষা করার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। পত্রিকায় লেখালেখির আগে
এ ব্যাপারে কর্পোরেশনের ঘুম ভাংগেনি।
জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে এই অবনতির আইনী মোকাবিলার চেয়ে চিকিত্সার
প্রয়োজন খুব বেশী। কেন অবস্থার এত ব্যাপক অবনতি হয়েছে তাও খতিয়ে
দেখার সময় এসে গেছে। এ ব্যাপারে সমাজ বিজ্ঞানী ও গবেষকদের এগিয়ে আসতে
হবে। এ বিষয়ে সরকার একটি জাতীয় কমিটিও গঠণ করতে পারেন।
ভেজাল দ্রব্য ও ভেজাল মূল্য
May 30, 2009 by writerershad