ক্ষুদ্র ঋণ ও সন্চয় ব্যবস্থাপনার জন্য নতুন
আইন ও সংস্থা / এরশাদ মজুমদার
ক্ষুদ্রঋণ ও সন্চয় ব্যবস্থাপনা দেখশুনা করার জন্য নতুন আইন তৈরী
হচ্ছে। প্রস্তাবিত আইনের অধীনে নতুন একটি সংস্থাও গঠিত হবে।
বাংলাদেশ ব্যান্কের গবর্ণর প্রস্তাবিত সংস্থার চেয়ারম্যান থাকবেন।
গবর্ণর সাহেব নিজেই এ কথা জানিয়েছেন।
স্বাধীনতার পঁয়ত্রিশ বছর পার হয়ে গেলেও ক্ষুদ্র সন্চয় ও ঋণ ব্যবস্থাপনায়
এতদিন তেমন কোন আইন ছিলোনা। বিশাল এই জগতটাকে
দেখশুনা করার জন্য তেমন কোন সংস্থাও ছিলোনা।
ক্ষুদ্র সন্চয় ও ঋণ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি রেগুলেটরী সংস্থা দরকার
অর্থমন্ত্রী দেরীতে হলেও বুঝতে পেরেছেন। অজগর এনজিও গুলো তাঁকে
বিষয়টি বুঝিয়েছেন। গুরুত্বপুর্ন এ বিষয়টি বুঝতে তাঁর এত দেরী হলো
কেনো বোধগম্য নয়।
বাজেটের আগে সাইফুর রহমান সাহেবের মন ভালো নেই।আবেগ অনুযোগ
অভিযোগের সুরে তিনি বলেছেন রাজনীতিতে তাঁর কোন প্রমোশন হয়নি।
১৯৭৮ সাল থেকে তিনি একই পদে আছেন। অথচ বহু সিকি আধুলী
টাকা হয়ে গেছে। সত্যিইতো তাঁর কোন প্রমোশন হয়নি। তিনি প্রেসিডেন্ট
জিয়ার মন্ত্রী ছিলেন,খালেদা জিয়ারও মন্ত্রী আছেন। আল্লাহ চানতো
ভবিষ্যতে তিনি অন্য জিয়ারও মন্ত্রী হতে পারেন।
৭৮ সালে তিনি অল্প
কিছুদিনের জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন। তারপরেই হয়ে গেলেন অর্থমন্ত্রী।
সেই থেকে তাঁর কোন প্রমোশন হয়নি। মন্ত্রণালয়েরও বদল হয়নি। তবে
প্রটোকলে তিনি যে দ্বিতীয় তা চোখে দেখা যায়। সংসদে তিনি প্রধানমন্ত্রীর
পাশে বসেন। অর্থাত্ তিনিই সংসদের ডেপুটি লিডারের মর্যাদা ভোগ
করছেন। এয়ারপোর্ট প্রটোকলেও তিনি প্রথম মন্ত্রীর মর্যাদা করছেন।
দেশের ক্ষুদ্র সন্চয় বা ক্ষুদ্র ঋণের
হিসাব বা অবস্থা কি তা সাইফুর রহমান সাহেবও হয়ত জানেন না। কারণ
সেভিংস বা ক্রেডিট বললেই অর্থমন্ত্রণালয়ের কথা মনে হলেও বাস্তবে
কিন্তু তা নয়। সারাদেশে কত সংগঠণ বা সংস্থা ক্ষুদ্র সন্চয় সংগ্রহ করে
আর ক্ষুদ্র ঋণ দেয় তার কোন ইয়ত্তা নেই। সমবায়ের এ ব্যাপারে বিরাট
ভুমিকা আছে। সমবায় সমিতিগুলো সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে। এরপরেও
রয়েছে বিরাট ইনফরমাল মাইক্রো ক্রেডিট মার্কেট। যার কোন খবরই
সরকারের কাছে নেই। যেহেতু বিষয়টা বাংলাদেশ ব্যান্কের অধীনে নয়
তাই বাংলাদেশ ব্যান্কও কিছু জানেনা।
সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তরের অধীনেও কিছু সমিতি আছে যারা সন্চয় সংগ্রহ
করে। সোসাইটি আইনের অধীনেও বহু সমিতি আছে যারা ক্ষুদ্র সন্চয়
ও ঋণদান কর্মসুচীতে নিয়োজিত আছে। স্বর্ণ বন্ধক নিয়ে ঋণদানের জন্য
জেলা প্রশাসক পোদ্দারের লাইসেন্স দেন।অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরাসরি
রয়েছে জাতীয় সন্চয় অধিদপ্তর। এই দপ্তর প্রতি বছর কয়েক হাজার
কোটি টাকার সন্চয় সংগ্র্ করে। এতে উচ্চহারে সুদ বা মুনাফা দেয়া হয়।
সরকারী নির্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকে সম্প্রতি মাইক্রো ফাইন্যান্স রিসার্চ এ্যান্ড
রেফারেন্স ইউনিট খোলা হয়েছে। কিন্তু এই ইউনিট সব মাইক্রো
ফাইন্যান্সের তদারকি করতে পারেনা। তারা এখন এনজিও গুলোর ক্ষুদ্র
সন্চয় ও ঋনের তদারকি করতে শুরু করেছে। প্রশাসনিক তদারকি করছে
অন্য আরেকটি বিভাগ। যদিও দুই বিভাগের মধ্যে কোন সমন্বয়
সহযোগিতা নেই। দেশে বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সংগঠণ-সমিতি আছে যারা স্থানীয়
ভাবে সন্চয় সংগ্রহ করে ও ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করে। এসব সংগঠণ
সরকারের কোন না কোন সংস্থার সাথে রেজিস্টার্ড বা তালিকাভুক্ত।
এরা গ্রামের সাধারন দরিদ্র মানুষের উপকার করে শোষণও করে।
শোষণ করে সরকারের নীতিহীনতার কারণে। বড় বড় এনজিওর
দুর্ণীতি শোষণের কথা আমরা প্রায়ই খবরের কাগজে দেখতে পাই।
যুদ্ধবাজ পশ্চিমা দেশগুলো ইসলামের বিরুদ্ধে,ইসলামী অর্থনীতির বিরুদ্ধে।
আমাদের দেশের অজগর মিডিয়া গুলোও প্রকাশ্যে ইসলামের বিরুদ্ধে। যখন
মস্কো ও পিকিং ইসলাম বিরোধীতা ছেড়ে দিচ্ছে তখন এই মিডিয়া এবং
তাদের দোসর এনজিও, আমলা ,ব্যান্কার,বুদ্ধিজীবী,সাংবাদিকরা বুশের সাথে
হাত মিলিয়েছে। অবাক ও বিস্ময়ের বিষয় সাবেক বামপন্থী ছাত্রনেতারা
এখন এনজিওদের এজেন্ট হিসাবে কাজ করছে।
বাংলাদেশের একটি অজগর সাইজের
এনজিও এখন মার্কিন কবলিত একটি দেশে কাজ করছে। কি কাজ করছে
তা সরকার জানেনা। বাংলাদেশ থেকে তারা বেশকিছু মাইনরিটি নাগরিককেও
ওখানে নিয়ে গেছেন। তারা নাকি খুবই বিশ্বস্ত। ওই সংগঠনটি সম্প্রতি
জমি বেচাকেনার মাধ্যমে প্রচুর অর্থ বিদেশে পাচার করেছে বলে গুজব আছে।
মস্কো থেকে পাশ করা একজন অর্থনীতিবিদ সম্প্রতি মৌলবাদের অর্থনীতি
নানাকথা লিখছেন। তাঁকে সাহায্য সহযোগিতা করে থাকে বাংলাদেশ
ব্যাংকের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা। বাংলাদেশ ব্যান্কের তথ্য প্রকাশ,প্রচার ও
ব্যবস্থাপনা দুর্বল এ কথা গবর্ণর সাহেব স্বীকার করেছেন। এই দুর্বলতার
এক শ্রেণীর কর্মকর্তা উদ্দেশ্য হাসিল ও জনমনে বিভ্রান্তি সৃস্টির তথ্য পাচার
করে নিজেদের আস্থার মিডিয়ার কাছে।
বেশ কিছুদিন ধরে দেশের শরীয়া ভিত্তিক ব্যাংক গুলোর বিরুদ্ধে
অজগর মিডিয়াগুলোকে ক্ষেপিয়ে তুলেছে ওই ব্যান্কারগণ। তাদের
লক্ষ্য শরীয়া ব্যাংকগুলো বন্ধ করে দেয়া। এখন তারা হাত বাড়িয়েছে কিছু
দেশী এনজিওর দিকে। তাদের কাছে পশ্চিমা অর্থে লালিত এনজিওগুলো
ধোয়া তুলসীপাতা।যাদের নেতারা ফতুয়া গায়ে দিয়ে পাজেরো গাড়ীতে
ঘুরে বেড়ায়। এসব এনজিওর
কোন জবাবদিহিতা নেই। কার কাছে জবাবদিহি করবে। ওরাতো পশ্চিমাদের
বরপুত্র। বিনা ট্যাক্সে ব্যবসা-বাণিজ্য,স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়,ব্যাংক সহ
সব ধরণের ব্যবসা করতে পারে। গ্রামের হত দরিদ্র মেয়েদের কাছ থেকে
পাঁচ টাকায় জিনিষ কিনে নিজেদের দোকানে পাঁচশ’ টাকা বিক্রি করে।
বিদেশে রফতানী করে আন্ডার ইনভয়েচিংয়ের করে।
এরা বিদেশে বাংলাদেশকে দুর্ণীতিবাজ অকার্যকর রাস্ট্র বলে
প্রচার করে। এরাই বাংলাদেশের তরুণরা সত্ কর্মঠ হয়ে
গড়ে উঠে নিজেদের পায়ে দাড়াক তা চায়না।
সম্ভাবনাময় সোনার এই বাংলাদেশকে নিয়ে চলছে নানা ষড়যন্ত্র।
বিদেশী সাহায্য ছাড়া
দেশী সন্চয়ে যে সব সমাজ কল্যাণমুলক দারিদ্র মোচনকারী সংস্থা গড়ে
উঠেছে তাদের বন্ধ করে দেয়ার জন্য একটি চক্র উঠেপড়ে লেগেছে।
বাংলাদেশকে বিদেশী এনজিও এবং সাহায্য সংস্থার কাছে নির্ভরশীল
করে রাখাই এই চক্রের লক্ষ্য। ইতোমধ্যেই বাণিজ্যিক ব্যান্কের আমানত
কমতে শুরু করেছে। মানি লন্ডারিং আইনের অপপ্রয়োগ শুরু হয়ে গেছে।
মানুষ ব্যান্কে টাকা জমা দিতে যেতে চায়না। ওখানে নানা হেনস্থা।
ফলে হুন্ডি বেড়ে গেছে। ইনফরমাল মানি মার্কেট শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
ডলারের দিন দিন বাড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যান্ক নাকি ব্যাপারটা বুঝতে পারছেনা।
বিদেশী এনজিও গুলোকে রাজনীতিতে নাক গলানোর ব্যাপারে উসকানী
দিচ্ছে তথাকথিত বাম সেকুলার বলে পরিচিত ব্যক্তি ও সংগঠণ গুলো।
বিদেশী অর্থ পায় এমন একটি এনজিওরো জবাবদিহিতা বা স্বচ্ছতা নেই।
কারন এরা সাবেক মন্ত্রী, সাবেক সচিব ও এদের সন্তান আত্বীয় স্বজনদের
চাকুরী ও টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করে। বাংলাদেশে দুর্ণীতির প্রধান
আখড়া বিদেশী সাহায্যপ্রাপ্ত এনজিওগুলো। এরা শত শত কোটি টাকার
ব্যবসা করে ট্যাক্স দেয়না।
এরা এক শ্রেণীর
সাংবাদিককে চামচা হিসাবে গড়ে তুলেছে। ইদানিং এসব এনজিও
শেয়ালের মতো একসাথে হুক্কা হুয়া করতে শুরু করেছে। দাবী মাইক্রো
ক্রেডিট ও স্মল সেভিংস রেগুলাটরী বডি গঠণ করতে হবে। এবং সেই বডি
তারাই নিয়ন্ত্রণ করবে। এখন তাদের হাতে বিরাট পুঁজি। সরকার তাদের
কিছুই করতে পারবেনা। ওদেরকে সাপোর্ট করে পশ্চিমা দেশগুলো।
দেরীতে হলেও অজগর এনজিও গুলো বুঝতে পেরেছে তাদের আইনের
আওতায় আসা দরকার। ‘হাজার ইঁদুর মেরে বিড়াল এবার হ্বজে চলেছে।’
তবু ভালো দেরীতে হলেও তারা বুঝতে পেরেছে তাদের ধরা পড়ার
সময় এসে গেছে।
ক্ষুদ্র ঋণ ও সন্চয় উত্সাহিত করে সঠিক পথে পরিচালিত করার
জন্য অবিলম্বে পৃথক রেগুলেটরী বডি স্থাপন করা অবশ্যই দরকার।
ক্ষুদ্র সন্চয়
ও ঋণের সাথে দেশের স্বার্থ ও অর্থনীতি জড়িত। দারিদ্র মোচনের কথা
বলে অজগর এনজিওগুলো গ্রামে গন্জে ছড়িয়ে পড়েছে। এই আবরনে তারা
ধর্ম প্রচার করে, সস্তায় পণ্য কিনে নেয়। এরা হচ্ছে ‘মার্চেন্ট অব পোভার্টি’।
বাংলাদেশ যখন মধ্য উন্নত দেশে পরিণত হচ্ছে তখনও তারা আরামে
দারিদ্রের রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
_______________
I feel that